হোটেল মুম্বই



অস্ট্রেলিইয়ান পরিচালক অ্যান্টোনি মারাসের ছবি ''হোটেল মুম্বই''। প্রতিপাদ্য বিষয় ২০০৮ সালের ভয়াবহ মুম্বই জঙ্গি হামলা। গতবছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে, ২৬/১১-র একদশক হওয়ায় টরোন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হয়েছে। যে ছবির দুই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন অনুপম খের এবং দেব প্যাটেল। চলতি বছরের শুরুতেও বিশ্বের ভিন্ন প্রান্তে মুক্তি পেয়েছে অ্যান্টোনির এই ছবি। তবে ভারতে এইপ্রথম মুক্তি পেল ''হোটেল মুম্বই''। লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ। দিন চারেক পেরোলেই সেই কালো দিনটি পার করবে একদশক। তাজের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সেই স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছে অনেক পরিবার। যাঁরা সেই ঘৃণ্য জঙ্গি হামলায় কাছের মানুষ হারিয়েছেন। মায়ানগরীতে যেভাবে আছড়ে পড়েছিল সেই ত্রাস, অ্যান্টোনির''হোটেল মুম্বই'' যেন সেই স্মৃতিকে ফের টাটকা করে দিল। পরিচালকের উপস্থাপনা একেবারে স্ট্রেট ফরোয়ার্ড। কোনও রকম ভনিতা না করেই একেবারে সোজাসুজি ছবির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ে টেনে নিয়ে গিয়েছে দর্শককে। একদশক পেরনোর পরও কিন্তু অ্যান্টোনির ছবি যেন সেই ভয়াবহ রাতে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। যেদিন সদ্যোজাতকে নিয়ে বিদেশ থেকে ঘুরতে আসা ডেভিড-জারা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি, যে ''শামিয়ানা''র রেড ওয়াইনের পর যে তাঁদের রক্তস্নাত হোটেলের লবি দেখতে হবে। সুইটে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে রাতে ব্যক্তিগত মজলিশে মজার বন্দোবস্ত করার সময়ও রাশিয়ান ব্যবসায়ী জেসন ঘুণাক্ষরেও টের পাননি যে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর সুইটে রক্তবন্যা বইবে। গোটা ছবিতে এমন কিছু দৃশ্য রয়েছে যে সেই দৃশ্যের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত নিষ্পলক থাকতে বাধ্য হবেন। হোটেলের লবির এক-একটা বাঁক যেন সেই চরম মুহূর্তে ডেথ-ভ্যালি। বাঁক ঘুরলেই আততাঁয়ীর গুলিতে মরতে হতে পারে। সন্তানের দেখভাল করা ন্যানি নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করেও বাঁচিয়েছেন কচিপ্রাণকে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এক মৃত্যুঞ্জয়ী মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁর সন্তানকে। অনুপম খের অভিনীত শেফ হেমন্ত ওবেরয় এবং হোটেলের কর্মী অর্জুনের চরিত্রের মধ্য দিয়ে পরিচালক বুঝিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় সংস্কৃতিতে তথা আবেগে ''অতিথি দেব ভবঃ'' কথাটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালের ২৬/১১-র এক দশক পেরিয়ে গেলেও অ্যান্টোনি মারাসের ''হোটেল মুম্বই'' আজকের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায় যে- আজও যদিও এরকম অঘটন ঘটে আমরা প্রস্তুত তো মোকাবিলা করার জন্য?